রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজার গুলো ছেয়ে গেছে ফরমালিনযুক্ত আমে। প্রশাসনের তেমন অভিযান দেখা যাচ্ছে না। ভূলতা,গাউছিয়া, গোলাকান্দাইল, তাঁত বাজার, তারাব বাজার,বরাব বাজার,রূপসী বাজার,বরপা বাজার,মুড়াপাড়া বাজার, কাঞ্চন ,ইউসুবগঞ্জ ,আতলাপুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারগুলোতে অবাধে ফরমালিনযুক্ত আম বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ফলের রাজা আমের রসালো ঘ্রাণ ছড়াতে শুরু করেছে উপজেলার বাজার গুলোতে। তবে বাজারে যে আম পাওয়া যাচ্ছে, তা স্বাভাবিক ভাবে পাকা নয়। দেশীয় অপরিপক্ক কাঁচা আমগুলো কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব আমের পচন ঠেকাতেও ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। ক্রেতাদের কাছে আকর্ষনীয় করতে মেশানো হচ্ছে কৃত্রিম রঙ। পাকা আমের মতো দেখতে হলেও এতে নেই পাকা আমের স্বাদ। অতি লোভে রাসায়নিক দিয়ে কৃত্রিম ভাবে পাকানো এ আম মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ফরমালিন হলো এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। ফরমালিন দেখতে সাদা পাউডারের মতো। যা পানিতে সহজেই দ্রবনীয়।রঙ দেখে চেনা যায় ফরমালিন যুক্ত আম। প্রাকৃতিকভাবে পাকা আমে হলুদ এবং সবুজের একটা মিশেল থাকবে। অনেক সময় কাঁচা পাকা রঙে ও দেখা যায়। আবার আমের গায়ে সাদাটে ভাব ও কালো কালো দাগ থাকবে। কিন্তু ফরমালিনসহ অন্যান্য কেমিকেল দিয়ে পাকানো আম দেখতে সম্পূর্ণ হলুদ হবে। দেখতে খুব সুন্দর ও চকচকে থাকবে। কোন দাগ থাকবে না। ফরমালিন মুক্ত আম মুুখে দিলে টক মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যাবে। এছাড়াও এসব আমে মাছি বসবে। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত আমে তেমন কোনও স্বাদ পাওয়া যাবে না। এগুলোতে মাছিও বসে না। এই ফরমালিন যুক্ত আম খেয়ে মানুষের ক্যান্সার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কঠিন রোগ ব্যাধি হতে পারে। বিশেষ করে ছোট ছোট শিশুদের ফরমালিযুক্ত আম খাওয়ালে বড় ধরনের রোগ হয়ে শিশুরা মারা পর্যন্ত যেতে পারে।
বর্তমান সরকার ফরমালিন জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করেছেন জেনেও আম ব্যবসায়ীরা তাতে কোন কর্ণপাত করছেন না। তবুও তারা বিক্রি করে যাচ্ছেন ফরমালিনযুক্ত আম।
সচেতন মহলরা জানান, প্রশাসনের নেই কোন মোবাইল কোর্ট, নেই কোন তদারকি, নেই কোন চেকিং, তাই মনে হচ্ছে প্রশাসন মহল নিরব ভূমিকাই পালন করছেন? আম ব্যবসায়ীরা জানান, আমাদের কি দোষ? আমরা তো বিভিন্ন মোকাম,বিভিন্ন বিভাগীয় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঝুড়ি করা অবস্থায় আম কিনে আনি। কোন ঝুড়িতে ফরমালিযুক্ত আম আছে আমরা কি করে বুঝবো। তাছাড়া আমাদের কাছে ফরমালিন চেক করার কোন মেশিন নেই।
চিকিৎসকেরা বলেন, ফরমালিনযুক্ত আম খেলে মুখের ভেতর হালকা জ্বালাপোড়া করতে পারে। কারো কারো পেটে ব্যথা, গলা জ্বলা ও ডাইরিয়াও হতে পারে। ফরমালিন যুক্ত আম খেলে কিডনি , লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। ফরমালিনের মাত্রা বেশী থাকলে খাওয়ার পর পরই মানুষের শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে।
গর্ভবর্তী মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে ও প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে। এ ফরমালিনের কারণে পেটের পীড়া, হাঁিচ,কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, আলসার ,চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে। এবিষয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম জানান, সারা দেশে অভিযোগ বিভিন্ন ধরনের ফলে বিশেষ করে আমে ফরমালিন আছে। সরকারিভাবে ফরমালিন চেক করার যে কিডছ বা সারঞ্জম আছে তা আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। যার কারণে আমরা ব্যাপক ভাবে অভিযান চালাতে পারছি না। ফরমালিনের ব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সব সময় জোরদার থাকবে।